লঞ্চ অগ্নিকাণ্ড: পুতুল এবার হারালেন স্বামীকে

লঞ্চ অগ্নিকাণ্ড: পুতুল এবার হারালেন স্বামীকে

হাসপাতালের বেডে শুয়ে শারীরিক কষ্ট আর যন্ত্রণার চেয়ে দুই সন্তান হারানোর বেদনা বেশি ভোগাচ্ছিলো পুতুলকে। এবার শোকের মাত্র বেড়েছে আরো। পরিবারের ৫ সদস্যের সঙ্গে হারিয়েছেন আরো এক সদস্য, তার স্বামীকে।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তার স্বামী রাসেল শেখ । দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ তার দুই সন্তান জীবন ও ইমনের এখনও সন্ধান মেলেনি।

রাসেল শেখ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার মৃত মো. গাফফার শেখের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাসেল শেখ বড়। পরিবারে রয়েছেন ছোট ভাই মুন্না ও তার মা ফাতেমা বেগম। তারা ঢাকায় থাকেন। বর্তমানে সবুজবাগের উত্তর মাদারটেক ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। রাসেল শেখ একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।

লঞ্চ অগ্নিকা-ের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে রাসেল শেখ, তার স্ত্রী পুতুল, কালু ও রবিন শুরুতে চিকিৎসাধীন ছিলেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক রাসেল শেখকে পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার আইসিইউতে মারা যান তিনি। তার শরীরের ২৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল বলে জানান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এসএম আইউব হোসেন।

এসএম আইউব হোসেন বলেন, ‘রাসেল শেখকে বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালানো হয়েছে। আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টেও রাখা হয়েছিল, কিন্তু বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’

মৃতের ভাইরা মিজানুর রহমান মিজান জানান, ‘ সোমবার রাতে রাসেল শেখের মরদেহ পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দিন। পরে স্বজনরা রাসেল শেখকে মাদারটেকে দাফন করেন।’
মিজান আরও বলেন, ‘রাসেল শেখের মৃত্যুর খবর রাতে তার স্ত্রী পুতুলকে জানানো হয়েছে। ভিডিও কলে ফোন করে লাশ দেখানো হয়েছে। পরে দাফন করা হয়। তার দুই সন্তানকে পাওয়া যায়নি। পুতুল তার সন্তানদের দেখতে চান। আমরা তাকে জানিয়েছি, তারাও চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) অভিযান ১০ লঞ্চে চড়ে বরগুনা জেলায় বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন পুতুলসহ পরিবারের ৯ সদস্য। গভীর রাতে লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ দুর্ঘটনায় ৯ সদস্যের মধ্যে ৫ জন নিখোঁজ হওয়ার পর ২ জনের লাশ শনাক্ত করা গেছে বরগুনায়। তাদের বরগুনা পুতুলের দুলাভাইয়ের বাড়িতে কবর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুতুলের ছোট দেবর রবিন সুস্থ আছেন। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এ পরিবারের পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ নেই।